করোনা সংক্রমণের বড় ঝুঁকি এখন কাঁচাবাজার

নিত্যপণ্য কেনার জন্য কাঁচাবাজার খোলা রাখা হলেও সেখানে সামাজিক দূরত্ব একদমই মানা হচ্ছে না। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী দেশের যে পাঁচটি অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি, সেখানকার বাজারগুলোতেও লোকসমাগম বেশি। এতে ভাইরাসের সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। অথচ সংক্রমণ প্রতিরোধে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন।

গতকাল রোববার পর্যন্ত সারা দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৫৬ জন। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও চট্টগ্রাম—এই পাঁচ অঞ্চলেই সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬৭৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন (গতকাল পর্যন্ত)। এই পাঁচ অঞ্চলের ২০টি বাজার স্বাস্থ্যবিধি মেনে গতকাল সরেজমিন পরিদর্শন করেন প্রথম আলোর প্রতিবেদকেরা।

রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের শাহ আলী সিটি করপোরেশন মার্কেট ও কাঁচাবাজারে গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, মুদিদোকান, মুড়ি, ফল ও মাছের দোকানে বেশি ভিড়। দোকানমালিকেরা বাজারে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য আলাদা পথ নির্ধারণ করলেও কেউ তা মানছেন না। একই দোকানে একসঙ্গে ১২-১৩ জন ক্রেতাকেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

শাহ আলী সিটি করপোরেশন মার্কেটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মানুষজন কোনো কথাই শুনছে না। রমজানের কারণে বাজারে এখন ক্রেতার চাপ বেশি। সামাজিক দূরত্ব রাখতে প্রশাসনের তদারকি আরও কঠোর হতে হবে।

বাজারটি শাহ আলী থানার অধীনে। এই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, মিরপুর ১ নম্বরের বাজারে প্রতিদিন হাজারো লোক আসছেন। কয়েকজন পুলিশ সদস্যের পক্ষে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। কোনো নির্দেশনাই লোকজন মানেন না। দোকানগুলোকে আরও দূরত্ব করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

কোভিড-১৯–এর বিস্তার ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য হাটবাজারগুলো খোলা স্থানে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ১২ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগ দেশের সব জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের এ নির্দেশনা জানিয়ে চিঠি দেয়।

মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। ক্রেতা–বিক্রেতা উভয়কেই সচেতন হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

গতকাল রাজধানীর বেশ কিছু সবজি ও মাছবাজার খোলা জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কল্যাণপুর নতুন বাজারের মাছ বিক্রির জায়গা অপ্রশস্ত। পাশাপাশি দুজন হাঁটলেও গায়ে গা লেগে যায়। সবজি বিক্রির জায়গাতেও একই অবস্থা। গতকাল দেখা যায়, মাছ ও সবজি বিক্রেতাদের বাজারের বাইরে মূল সড়কের ফুটপাতে নিয়ে আসা হয়েছে।

কল্যাণপুর নতুন বাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম জানান, সবার সঙ্গে কথা বলে মাছ ও সবজিবাজার মূল সড়কের ফুটপাতে নিয়ে আসা হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও দূরত্ব রক্ষা হবে।

কারওয়ান বাজারেও ক্রেতা–বিক্রেতাদের কেউ সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। কারওয়ান বাজার কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, বিক্রেতাদের মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার করতে বলেছেন তাঁরা।

শনির আখড়ার মূল সড়কের দুই পাশে সবজি, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি হয়। গতকাল দুপুর ১২টায় সেখানে মানুষ আর রিকশার ভিড়ে যানজট লেগে যায়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা দূরের কথা, ভিড়ের মধ্যেই চলছিল কেনাকাটা।

সার্বিক বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে, জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়েই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে জরুরি হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা। এটি ক্রেতা–বিক্রেতা সবাইকে মানতে হবে, মানাতে হবে। আর তা নিশ্চিত করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সিটি করপোরেশন। বাজারে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা না গেলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে।

নারায়ণগঞ্জের বাজারে প্রশাসনের তৎপরতা কম
ঢাকার পরে সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ। এখানকার বাজারগুলোতেও সামাজিক দূরত্ব না মেনে বেচাকেনা হচ্ছে। শহরের পাইকারি কাঁচাবাজার দ্বিগুবাবুর বাজার, কালীর বাজার, ৫ নম্বর ঘাট মাছবাজার, খানপুর বউবাজার ও ফতুল্লা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

দ্বিগুবাবুর বাজার থেকে শহর ও আশপাশের এলাকার সবজি সরবরাহ হয়ে থাকে। এই বাজারে র‌্যাব-১১–এর উদ্যোগে একমুখী প্রবেশপথ ও সামাজিক দূরত্বের বৃত্ত করে দিলেও সেগুলো ক্রেতা-বিক্রেতারা মানছেন না।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। তবে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে।

গাজীপুরেও একই পরিস্থিতি
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের পরই গাজীপুরের অবস্থান। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১১ এপ্রিল পুরো জেলা লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করা হয়। কিন্তু স্থানীয় বাজারগুলোতে গাদাগাদি করে কেনাকাটা করছেন মানুষ। সামাজিক দূরত্ব না মানায় আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে এই জেলা।

শহরের সবজিবাজার, কোনাবাড়ী সবজিবাজার, সফিপুর বাজার এবং ভোগরা বাইপাস এলাকার সবজি আড়তে দেখা যায়, মানুষ দূরত্ব বজায় না রেখেই কেনাকাটা করছেন। সকাল থেকে বাজার বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত শত শত মানুষের ভিড় লেগে থাকছে।

জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। গত শনিবার ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা এবং ১৯ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

নরসিংদীর বাজারগুলোতেও উদাসীনতা
নরসিংদীতে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকলেও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়ে উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। শহরের বড়বাজার, বটতলা বাজার, শিক্ষা চত্বর বাজার, ভেলানগর বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় গায়ে গা লেগে লোকজন বাজার করছেন।

জেলা করোনা প্রতিরোধ জরুরি সেলের প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইমরুল কায়েস বলেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুরোধের পরেও লোকজন বের হচ্ছেন।

চট্টগ্রামেও বাজারে জটলা
চট্টগ্রাম শহরের বাজারগুলোতেও হাজারো ক্রেতা। দোকানে দোকানে জটলা। নগরের অন্যতম বড় বাজার রিয়াজউদ্দিন বাজার, পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই ঘুরে দেখা যায়, গা ঘেঁষে কেনাকাটা চলছে। অনেকের মুখে মাস্ক নেই।

হাটবাজারে জটলা বা ভিড় বন্ধ করতে চট্টগ্রাম নগরের আউটার স্টেডিয়াম, নতুন স্টেশনের পার্কিংয়ের জায়গাসহ উন্মুক্ত স্থানে কাঁচাবাজারগুলো স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি করপোরেশন। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে চট্টগ্রামে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

মেয়র নাছির উদ্দীন বলেন, জটলা এড়াতে প্যারেড মাঠে একটি কাঁচাবাজার স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু সেখানেও জটলা পাকানো বন্ধ হয়নি।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা]

প্রথম আলো

The Red Cross recommends the following steps to help prevent the spread of germs duringthis situation:

1-Stay home if you can and avoid gatherings of more than ten people.

2. Practice social distancing by keeping a distance of about six feet from others if you must go out in public. 3. Wash your hands often with soap and water for at least 20 seconds, especially after being in a public place, or after blowing your nose, coughing or sneezing. If soap and water are not readily available, use a hand sanitizer with at least 60% alcohol.

4. Avoid touching your eyes, nose or mouth with unwashed hands. 5. Avoid close contact with people who are sick.

6. Stay home if you are sick, except to get medical care.

7. Cover your nose and mouth with a tissue when coughing or sneezing; throw used tissues in the trash. If a tissue isn’t available, cough or sneeze into your elbow or sleeve, not your hands.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button