করোনায় আক্রান্ত হয়েও থামেননি বাংলাদেশি এই নার্স
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে নিজে আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালের পরামর্শে বাসায় আইসোলেশনে ছিলেন। একসময় মনে হয়েছে লড়াইয়ে হেরে যাচ্ছেন। তবে ২৪ দিনের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জিতেছেন তিনি। সুস্থ হয়ে উঠেছেন। নিজের জীবনের কথা না ভেবে আবার কাজে যোগ দিয়েছেন। হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। করোনার সম্মুখসারির এই যোদ্ধার নাম সাঈদা আরা (২৬)। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই নার্সের বাড়ি ফেনী।
সাঈদা নার্সিং পেশায় কাজ করেন নিউইয়র্কের নর্থশোর এলআইজে হাসপাতালে। ২০১৩ সালে আমেরিকায় আসেন তিনি। পড়েন নার্সিংয়ে। বাবা–মা দেশে। নগরের জ্যামাইকা এলাকায় থাকেন অন্য এক পরিবারের সঙ্গে। ২০১৬ সালে যোগ দেন নার্সিং পেশায়। নগরের একপ্রান্তে শ্বেতাঙ্গবহুল এলাকার বিশেষায়িত হাসপাতালে স্পেশাল কেয়ারিং ইউনিটের দায়িত্বে আছেন তিনি।
কাজের ফাঁকে ১৯ এপ্রিল প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন সাঈদা। আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বললেন, ‘আল্লাহ আমাকে জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন। যত দিন এই জীবন থাকবে, সামর্থ্য থাকবে, মানুষের পাশে আমাকে দাঁড়াব।’
নিউইয়র্কে করোনার শুরুর দিকের কথা জানাতে গিয়ে সাইদা বলেন, মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই তাঁদের হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত মানুষ চিকিৎসা নিতে আসা শুরু করে। হাসপাতালেই আবার অনেকে আক্রান্ত হতে থাকে। চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগীকে আলাদা রাখা হয়। শুরুতেই হাসপাতালের কয়েকজনের মধ্যে করোনায় আক্রান্তের ঘটনা ঘটে। কেউ কেউ মারা যায়।
সাঈদা বলেন, একপর্যায়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে লাগল। নিউইয়র্ক নগরের হাসপাতালগুলো অনেকটাই বেসামাল হয়ে ওঠে। তাদের কাজ বেড়ে যায়। স্বাভাবিক সময়ে দিনে আট ঘণ্টা কাজ করতেন। করোনা রোগীদের আগমন বাড়তে থাকলে দিনে তাঁকে ১৯ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে। কেউ তাঁকে বাধ্য করেনি, পেশার প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি কাজ করে যাচ্ছিলেন বিপদাপন্ন মানুষের সেবায়। করোনা রোগী আসছে, মারা যাচ্ছে একের পর এক। এমন বাস্তবতায় ২৬ মার্চ নিজেই অসুস্থবোধ করতে থাকেন তিনি।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই নার্স বলেন, তাঁর গায়ে জ্বর ছিল না। শুধুই শরীরটা অস্বাভাবিক লাগছিল, শক্তি পাচ্ছিলেন না। ঘাড়ে, মাথায় তীব্র ব্যথা শুরু হল। রাত একেবারে নিদ্রাহীন হয়ে পড়ে। মাথা ব্যথার এক দিন পরে জ্বর আসে। নাকের ঘ্রাণশক্তি কমে যায়। খাবারের কোনো রুচি থাকে না। ডাক্তার তাঁকে বাসায় আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেন। করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হলো। আট দিন পর রেজাল্ট আসে করোনা পজিটিভ। তত দিনে শারীরিক অবস্থা আরও নাজুক হতে থাকে। একপর্যায়ে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
সাইদা জানান, তিনি শুরু থেকেই কোনো ওষুধ, এমনকি টাইলানল পর্যন্ত নেননি অন্য কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ে। অবশ্য সার্বক্ষণিক ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছেন। প্রচুর পানীয় পান করেছেন। ডাক্তারের পরামর্শে বাইরে গিয়ে রোদে হেঁটেছেন। এর মধ্যেও একপর্যায়ে শারীরিক অবস্থা চরম নাজুক হয়ে পড়লে অ্যাম্বুলেন্স কল করেন। তবে শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বাসায় একা থাকেন। মনোবল একদম ভেঙে যাওয়ার অবস্থা হয় তাঁর। জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে দেশে থাকা মা–বাবার কথা মনে পড়ে। মৃত্যুর আগে একবারও কি তাঁদের সঙ্গে শেষ দেখা হবে না? এমন ভাবনায় পড়েও মন শক্ত রাখেন তিনি।
কথার ফাঁকে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদককে বলেন, সবাই চিন্তায় পড়ে যাবে—এই আশঙ্কায় মা–বাবার একমাত্র মেয়ে সাঈদা নিজের অসুস্থতার কথা স্বজনদের কাউকে জানালেন না। তবে এখানে তাঁর বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব প্রতিদিন ফোন করে তাঁকে সাহস দিয়ে গেছেন।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সাইদা বলেন, করোনাভাইরাস একেকজনকে একেকভাবে আক্রমণ করছে। প্রায় প্রতি রোগীর মধ্যে আলাদা লক্ষণ দেখা যায়। সবচেয়ে নাজুক হয়ে ওঠে যখন শরীর একদম দুর্বল হয়ে ওঠে, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। মন একদম ভেঙে পড়ে। তখন মনোবল বজায় রাখাই বড় ব্যাপার।
মৃত্যুর সঙ্গে একাকী লড়াইয়ে এ দফা জিতে যান সাঈদা। দুই সপ্তাহ পর থেকে শারীরিক অবস্থা ভালোর দিকে যায়। আক্রান্ত হওয়ার ১৭ দিনের মাথায় কিছুটা কাশি থাকলেও শরীর ভালো হয়ে উঠছে মনে করলেন। ২৪ দিনের লড়াই শেষে নিজেই কাজে যেতে উদ্যোগী হন তিনি। ইচ্ছা করলে কাজে দ্রুত না গেলেও পারতেন। নিজের পেশা আর দায়িত্বের কারণে হাসপাতালে মৃত্যুপথযাত্রী রোগীদের জন্য ছুটে যান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই তরুণ নার্স।
সুস্থ হয়ে নিজের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি মা–বাবাকে জানালেন সাঈদা। মেয়ের কথা শুনে তাঁরা কিছুটা চিন্তিত হলেও মেয়ের কাজে ফেরায় গর্বিত তাঁরা। ঢাকা থেকে তাঁর মা বলেন, ‘আমার মেয়েকে এমনভাবে গড়ে তুলেছি, সে যেকোনো পরিস্থিতিতে লড়াই করতে পারবে।’
মায়ের দেওয়া আত্মবিশ্বাসের কথা বলে সাইদা বলেন, ‘হাসপাতালে করোনা রোগী আসছে। নিজের ফিরে পাওয়া জীবনকে এসব রোগীর জন্য উৎসর্গ করেছি। এসব বিপদাপন্ন রোগী অসহায় হয়ে তাকিয়ে থাকেন ডাক্তার–নার্সের দিকে। এ যে আমার দায়িত্ব, এ আমার পেশার শপথ। হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে কমেছে, তারপরও রোগী আসছে। মারা যাচ্ছে।’
তাঁর হাসপাতালে শ্বেতাঙ্গ ও ইহুদি রোগী এবং মৃত মানুষের সংখ্যা বেশি বলে জানালেন সাঈদা। নিজের ইউনিটে মারা যাওয়া অনেক করোনা রোগীর কথা স্মরণ করে বিমর্ষ হন। বলেন, জীবনের শেষ সময়টাতে হাত বাড়িয়ে দেওয়া এসব রোগী আর কেবল রোগী থাকে না।
নিউইয়র্কের মানুষের জন্য সাঈদার অনুরোধ, করোনার লক্ষণ দেখা গেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। হাসপাতালে না গিয়ে নিজেই বাসায় লড়াই করাকে প্রাধান্য দিন। ডাক্তারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখুন, পরামর্শ নিন।
এই নার্স বলেন, তাঁদের হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত মানুষকে মানসিকভাবে শক্ত রাখার জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা আছে। নিজেও এমন কাউন্সেলিং নিয়েছেন।
আবেগাক্রান্ত কণ্ঠে সাঈদা বললেন, ‘বিশ্বাস করি, নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। যত দিন বেঁচে থাকব, নিজের শরীরে সামর্থ্য থাকবে, তত দিন রোগীদের সেবা দিয়ে যাব।’
The Red Cross recommends the following steps to help prevent the spread of germs duringthis situation:
1-Stay home if you can and avoid gatherings of more than ten people.
2. Practice social distancing by keeping a distance of about six feet from others if you must go out in public. 3. Wash your hands often with soap and water for at least 20 seconds, especially after being in a public place, or after blowing your nose, coughing or sneezing. If soap and water are not readily available, use a hand sanitizer with at least 60% alcohol.
4. Avoid touching your eyes, nose or mouth with unwashed hands. 5. Avoid close contact with people who are sick.
6. Stay home if you are sick, except to get medical care.
7. Cover your nose and mouth with a tissue when coughing or sneezing; throw used tissues in the trash. If a tissue isn’t available, cough or sneeze into your elbow or sleeve, not your hands.