বাড়িতে ড্রাম ভর্তি চাল, ইউএনওকে ফোন দিয়ে বললেন দুদিন না খাওয়া
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনে মানুষ নিজের ঘরে অবস্থান করছেন। এরই মাঝে অনেক সম্পদশালী নিজেকে প্রশাসনের কাছে অসহায় বলে পরিচয় দিচ্ছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যখন ফোন পেয়ে ওই ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে তাদের সম্পদ ও বাড়ির অবস্থান দেখছেন তখন হচ্ছেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়! ইতোমধ্যে এমন দুটি ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের দুই উপজেলায়।
সম্প্রতি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় শতগ্রাম ইউনিয়নের এক ব্যক্তি ৩৩৩ ফোন দিয়ে বলেন,‘আমাকে খাবার দেন না হয় গুলি করে মেরে ফেলেন।’ এ ঘটনায় দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলমের নির্দেশে সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তির বাড়িতে বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়ামিন হোসেন খাবার নিয়ে হাজির হন। কিন্তু ওই ব্যক্তির বাড়ি গিয়ে তিনি যা দেখলেন তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তারপরও তিনি ওই ব্যক্তির বিষয়ে জানার জন্য অনেকটা অতি উৎসাহী হয়ে সান্ত্বনা দেয়ার ছলে ঘরে প্রবেশ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই ব্যক্তির ঘরে প্রবেশ করে দেখেন- কিছুক্ষণ আগে রাতের খাবার শেষ করে খাবারের প্লেট সেখানে রাখা আছে। ছেলে ল্যাপটপ ব্যবহার করছেন। ইটের তৈরি বাড়ি। খাটে বিছানো দামি বেড সিট। ঘরে চাল, ডালসহ বাজার রয়েছে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই ব্যক্তিকে খাবার সামগ্রী দিয়ে কর্মস্থলে চলে আসেন।
এদিকে গত সোমবার (২৭ এপ্রিল) রাতে জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার এমন দুটো ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. নাজমুন নাহার তার নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে ‘ইউএনও নবাবগঞ্জ’ নামে ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিয়েছেন। পোস্টটি জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
‘দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে বিভিন্ন হাটবাজারে অভিযান পরিচালনা ও ত্রাণ সহায়তা প্রদান করতে গিয়ে যেটা উপলব্ধি তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে মেনে নিতে আজ বড্ড খারাপ লাগছে। কারণ যে জনগণকে ভালো রাখার জন্য নিজের ছোট শিশু পরিবারকে বঞ্চিত করে দিনরাত এক করে মানুষকে সচেতন করতে তাদের করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত রাখতে আমরা সকলে মিলে ছুটে চলেছি, সম্ভাব্য জায়গায় প্রয়োজনমত ত্রাণ সহায়তা সরকারের সাধ্য অনুযায়ী প্রদানের ব্যবস্থা নিচ্ছি, ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জ ও অন্যান্য এলাকা থেকে আগত ব্যক্তিদের ত্রাণ সহায়তা দিয়ে নিজেদের বাসাতে অথবা কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে আবদ্ধ থাকতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আজ সেইসব মানুষেরা ভাইরাসকে নয়, যেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ও তার গাড়িটাকে ভাইরাস মনে করে ছুটছেন।
চলে আসলে আবার নিজেদের জায়গায় এসে গল্প করছেন, অকারণে ঘোরাঘুরি করছেন। কোনো কোনো সময় নিজের মাকে, সন্তানকে রোগী বানিয়ে ২০১৬/২০১৭ সালের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে পথ্য কেনার বাহানা করে অযাচিতভাবে ঘুরছেন। নিজের যথেষ্ট খাবার থাকার পরও খাবারের আবেদন জানাচ্ছেন যাতে করে প্রকৃত যারা সাহায্য পাবার হকদার তারাও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলছেন।
আজ কয়েকটা বাজারে লোকজনকে জিজ্ঞেস করলাম- কি কিনতে বাজারে আসছেন? উত্তরের কিছুই বলে না, উল্টো পালানোর চেষ্টা করে।
বাবা ছেলেকে সেলুনে নিয়ে আসছে চুল কাটাতে কিন্তু এই যে আদরের ফুটফুটে শিশুটিকে সেলুন এ নিয়ে আসলেন বাবা, যদি এখান থেকে কোন কিছু সূত্রপাত হয় পারবেন বাবা হিসেবে নিজেকে মাফ করতে…
দুইজন মহিলা ফোন করে বললেন- মা দুইদিন হলো না খেয়ে আছি চেয়ারম্যান সাহেবরা তো আমাদের কোনো খোঁজও নেয় না, কোন সহযোগিতাও করে না। তখন ঠিকানা নিয়ে খাবার দিতে গিয়ে চোখ কপালে উঠে গেল। তার বাসায় ড্রাম ভর্তি চাল, আলু পেঁয়াজ কোনো কিছুর অভাব নাই, ছাদ পেটানো বাসা বানানো হচ্ছে আরও অনেক কিছু।
আপনার এহেন আচরনের কারণে আপনার পাশের বাড়ির প্রকৃত গবিব লোকটি বঞ্চিত হচ্ছে। গরিব লোকটি আবার গালি দিবে কাকে…সরকারকে। আপনাকে যদি আপনার এহেন আচরণের কারণে আইনের আওতায় আনা হয় কাকে দোষারোপ করবেন…সরকারি সিস্টেমকে। অধিকাংশ মানুষ মাস্ক ছাড়া ঘুরছেন। আপনি কি নিশ্চিত আপনার আশপাশে কোনো করোনা রোগী নেই। আপনার অসাবধানতার জন্য যদি আপনার কিছু হয় তাহলে কাকে দোষারোপ করবেন।
তারপরও, আপনাদের ভালো রাখতে আমরা সব সময় মাঠে থাকব, যেকোনো প্রয়োজনে আপনাদের পাশে থাকব, সাহায্য সহযোগিতা করার আপ্রাণ চেষ্টা করব। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যাতে আমাদের এই সুন্দর বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে আবার আগের মত মুখরিত করতে পারি আপনাদের সঙ্গে নিয়ে ইনশাআল্লাহ। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে একটাই প্রতিকার ঘরে থাকা। ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. নাজমুন নাহার বলেন, চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতে কিছু সম্পদশালী মানুষ প্রশাসনের সঙ্গে তামাশা করছে। তাদের কারণে অন্যরাও বঞ্চিত হবে।
দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম বলেন, এই মুহূর্তে ওই সমস্ত ব্যক্তির কাছে আমরা এমন ব্যবহার আশা করছি না। আমরা সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের সহযোগিতা কামনা করছি। ইতোমধ্যে দিনাজপুরে ১৫ জন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের নিরাপদ থাকতে হলে বাড়িতে অবস্থান করতে হবে। সবার পরিবারকে ভালো রাখতে লকডাউন মেনে চলুন ভালো থাকুন। তবে ত্রাণ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আইনের আওতায় আনা হবে।
দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক বলেন, সমাজের সবার ভালোর জন্য আমাদের ত্রাণ নিয়ে তামাশা করা ঠিক হবে না। সমজকে ভালো রাখতে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। ইতোমধ্যে বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর উপজেলায় ৫০ হাজার পরিবারের মধ্যে খাবার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
The Red Cross recommends the following steps to help prevent the spread of germs duringthis situation:
1-Stay home if you can and avoid gatherings of more than ten people.
2. Practice social distancing by keeping a distance of about six feet from others if you must go out in public. 3. Wash your hands often with soap and water for at least 20 seconds, especially after being in a public place, or after blowing your nose, coughing or sneezing. If soap and water are not readily available, use a hand sanitizer with at least 60% alcohol.
4. Avoid touching your eyes, nose or mouth with unwashed hands. 5. Avoid close contact with people who are sick.
6. Stay home if you are sick, except to get medical care.
7. Cover your nose and mouth with a tissue when coughing or sneezing; throw used tissues in the trash. If a tissue isn’t available, cough or sneeze into your elbow or sleeve, not your hands.