দুইদিন পর ভাত খাবেন বৃদ্ধা ময়ুরী
‘দুইদিন পর আইজ ভাত খামু। এক বাসা থাইক্যা ভাত- তরকারি চাইয়া আনছি। আর এই যে একজনে পাঁচ কেজি আটা দিছে। এই দিয়া কোনোমতে দিন কাটামো। কিন্তু আটা শেষ অইলে খাওন পামু কই? করোনার কারণে শেষমেশ না খাইয়া মরতে অয়নি কে জানে?’
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নিজের ভাগ্যের কথা এভাবে বলছিলেন রাজধানীর নীলক্ষেত বাবুপুরা বস্তির বাসিন্দা বৃদ্ধা ময়ুরী। দুদিন অভুক্ত থাকার পর শনিবার (২৮ মার্চ) ভাত খাবেন এই বৃদ্ধা। তিনি এলিফ্যান্ট রোড এলাকার কয়েকটি বাসায় ছুটা গৃহকর্মীর কাজ করেন। যেসব বাসায় তিনি কাজ করতেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্কে আপাতত সে সব বাসা থেকে তাকে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে।
দুদিন ধরে সামান্য জ্বর ও কাশি থাকায় এবং সরকার থেকে ঘরের বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশে ঘর থেকে বের হননি। ঘরে চাল ছিল না, তাই আটার রুটি খেয়ে দুদিন কাটিয়েছেন। আজ শনিবার ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে মুখে মাস্ক লাগিয়ে এক বাসা থেকে ভাত ও তরকারি চেয়ে এনেছেন।
কড়কড়ে রোদের মধ্যে দুপুর ১২টার দিকে আজিমপুর কবরস্থানের সামনে এক হাতে একটি ছোট্ট টিফিন ক্যারিয়ার ও আরেক হাতে পলিথিনে আটা নিয়ে হেঁটে আসতে দেখা যায় ময়ুরীকে। অদূরে ট্রাকে ওএমএসের (খোলাবাজারের) আটা ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ময়ুরী জানান, সেখানে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এক ব্যক্তি ৫ কেজি আটা কিনে দেন। আটা হাতে নিতেই তার দুচোখ ছলছল করে ওঠে।
জাগো নিউজকে ময়ুরী বলেন, ‘কী যে গজব আইলো, আমাগো মতো গরিব মানুষ এই রোগে না, কাম কাজ না থাকায় না খাইয়া মরার জো অইছে।’
করোনাভাইরাসের কারণে ময়ুরীদের মতো অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে সংখ্যায় কম হলেও কিছু হৃদয়বান এগিয়ে এসেছেন। শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ওএমএসের দোকানে এ ধরনের কিছু প্রচারবিমুখ মানুষ ময়ুরীর মতো গরিবদের বিনামূল্যে ৫ কেজি করে আটা সাহায্য দিয়েছেন।
আবুল হোসেন নামে এক রিকশাচালক বলেন, রাস্তাঘাটে মানুষ কম। গত দেড় ঘণ্টায় ৪০ টাকার খেপ মেরেছি। ওএমএসের ট্রাকের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোয় আমাকেও বিনামূল্যে ৫ কেজি আটা দেয়া হয়েছে।
source: https://www.jagonews24.com